লাভবান হতে চাইলে মানুষের মধ্যে কয়েকটি মৌলিক গুণ থাকতে হবে৷
এর মধ্যে:
হাইলইটস:
এটি হিদায়াত সেই ‘মুত্তাকী’দের
জন্য (সূরা বাক্কারাহ আয়াত-২ hudal lilmuttaqeen)
যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস
করে (সূরা বাক্কারাহ আয়াত-৩ Allazeena yu'minoona bilghaib)
নামায কায়েম করে
(সূরা বাক্কারাহ আয়াত-৩ wa yuqeemoonas salaata)
যে রিযিক আমি তাদেরকে
দিয়েছি তা থেকে খরচ করে (সূরা বাক্কারাহ আয়াত-৪ wa mimmaa razaqnaahum
yunfiqoon)
যে কিতাব তোমাদের ওপর
নাযিল করা হয়েছে (অর্থাত কুরআন) এবং তোমার আগে যেসব কিতাব নাযিল করা হয়েছিল সে সবগুলোর
ওপর ঈমান আনে (সূরা বাক্কারাহ আয়াত ৪ Wallazeena yu'minoona bimaa unzila
ilaika wa maaa unzila min qablika)
আখেরাতের ওপর একীন রাখে৷
(সূরা বাক্কারাহ আয়াত-৪ wa bil Aakhirati hum yooqinoon)
১. সর্বপ্রথম যে গুণটির প্রয়োজন সেটি হচ্ছে, তাকে "মুত্তাকী" হতে হবে৷ ভালো ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা তার মধ্যে থাকতে হবে৷ তার মধ্যে মন্দ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার ও ভালোকে গ্রহণ করার আকাংখা এবং এ আকাংখাকে বাস্তবায়িত করার ইচ্ছা থাকতে হবে৷ তবে যারা দুনিয়ায় পশুর মতো জীবন যাপন করে, নিজেদের কৃতকর্ম সঠিক কি না সে ব্যাপারে কখনো চিন্তা করে না, যেদিকে সবাই চলছে বা যেদিকে প্রবৃত্তি তাকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে অথবা যেদিকে মন চায় সেদিকে চলতে যারা অভ্যস্ত, তাদের জন্য কুরআন মজীদে কোন পথনির্দেশনা নেই৷
২. দ্বিতীয় শর্ত৷ 'গায়েব' বা অদৃশ্য বলতে এমন গভীর সত্যের প্রতি ইংগিত করা হয়েছে যা মানুষের ইন্দ্রিয়াতীত এবং কখনো সরাসরি সাধারণ মানুষের প্রত্যক্ষ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতায় ধরা পড়ে না৷ যেমন আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী, ফেরেশতা, অহী, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি৷ এ গভীর সত্যগুলোকে না দেখে মেনে নেয়া এবং নবী এগুলোর খবর দিয়েছেন বলে তাঁর খবরের সত্যতার প্রতি আস্থা রেখে এগুলোকে মেনে নেয়াই হচ্ছে 'ঈমান বিল গায়েব' বা অদৃশ্যে বিশ্বাস৷ এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আয়াতের অর্থ হচ্ছে এই যে, যে ব্যক্তি মেনে নেয়ার জন্য দেখার , ঘ্রাণ নেয়ার ও আস্বাদন করার শর্ত আরোপ করে এবং যে ব্যক্তি বলে , আমি এমন কোন জিনিস মেনে নিতে পারি না যা পরিমাণ করা ও ওজন করা যায় না—সে এ কিতাব থেকে হিদায়াত ও পথনির্দেশনা লাভ করতে পারবে না৷
৩. তৃতীয় শর্ত হচ্ছে, যারা কেবল মেনে নিয়ে নীরবে বসে থাকবে তারা কুরআন থেকে উপকৃত হতে পারবে না৷ বরং মেনে নেয়ার পর সংগে সংগেই তার আনুগত্য করা ও তাকে কার্যকর করাই হচ্ছে এ থেকে উপকৃত হবার জন্য একান্ত অপরিহার্য প্রয়োজন৷ আর বাস্তব আনুগত্যের প্রধান ও স্থায়ী আলামত হচ্ছে নামায৷ ঈমান আনার পর কয়েক ঘন্টা অতিবাহিত হতে না হতেই মুয়াযযিন নামাযের জন্য আহবান জানায় আর ঈমানের দাবীদার ব্যক্তি বাস্তবে আনুগত্য করতে প্রস্তুত কি না তার ফায়সালা তখনই হয়ে যায়৷ এ মুয়াযযিন আবার প্রতিদিন পাঁচবার আহবান জানাতে থাকে৷ যখনই এ ব্যক্তি তার আহবানে সাড়া না দেয় তখনই প্রকাশ হয়ে পড়ে যে, ঈমানের দাবীদার ব্যক্তি এবার আনুগত্য থেকে বের হয়ে এসেছে৷ কাজেই নামায ত্যাগ করা আসলে আনুগত্য ত্যাগ করারই নামান্তর ৷ বলা বাহুল্য কোন ব্যক্তি যখন কারোর নির্দেশে মেনে চলতে প্রস্তুত থাকে না তখন তাকে নির্দেশ দেয়া আর না দেয়া সমান৷
ইকমাতে সালাত বা নামায কায়েম করা একটি ব্যাপক ও পূর্ণ অর্থবোধক পরিভাষা একথাটি অবশ্যি জেনে রাখা প্রয়োজন৷ এর অর্থ কেবল নিয়মিত নামায পড়া নয় বরং সামষ্টিকভাবে নামাযের ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠিত করাও এর অর্থের অন্তর্ভুক্ত৷ যদি কোন লোকালয়ে ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেক ব্যক্তি নিয়মিতভাবে নামায পড়ে থাকে কিন্তু জামায়াতের সাথ এ ফরযটি আদায় করার ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে সেখানে নামায কায়েম আছে, একথা বলা যাবে না৷
৪. চতুর্থ শর্ত হচ্ছে কুরআনের হিদায়াত লাভ করা। সংকীর্ণমনা ও অর্থলোলুপ না হয়ে মানুষকে হতে হবে আল্লাহ ও বান্দার অধিকার আদায়কারী৷ তার সম্পদে আল্লাহ ও বান্দার যে অধিকার স্বীকৃত হয়েছে তাকে তা আদায় করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে৷ যে বিষয়ের ওপর সে ঈমান এনেছে তার জন্য অর্থনৈতিক ত্যাগ স্বীকার করা ব্যাপারে সে কোন রকম ইতস্তত করতে পারবে না৷
৫. পঞ্চম শর্ত হচ্ছে আল্লাহ অহীর মাধ্যমে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পূর্ববর্তী নবীগণের ওপর বিভিন্ন যুগে ও বিভিন্ন দেশে যেসব কিতাব নাযিল করেছিলেন সেগুলোকে সত্য বলে মেনে নিতে হবে৷ এ শর্তটির কারণে যারা আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য বিধান অবতরনের প্রয়োজনীয়তাকে আদতে স্বীকারই করে না অথবা প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকার করলেও এ জন্য অহী ও নবুওয়াতের প্রয়োজন আছে বলে মনে করে না এবং এর পরিবর্তে নিজেদের মনগড়া মতবাদকে আল্লাহর বিধান বলে ঘোষণা করে অথবা আল্লাহর কিতাবের স্বীকৃতি দিলেও কেবলমাত্র সেই কিতাবটি বা কিতাবগুলোর ওপর ঈমান আনে যেগুলোকে তাদের বাপ-দাদারা মেনে আসছে যারা এ উতস থেকে উতসারিত অন্যান্য বিধানগুলোকে অস্বীকার করে –তাদের সবার জন্য কুরআনের হিদায়াতের দুয়ার রুদ্ধ৷ এ ধরনের সমস্ত লোককে আলাদা করে দিয়ে কুরআন তার অনুগ্রহ একমাত্র তাদের ওপর বর্ষণ করে যারা নিজেদেরকে আল্লাহর বিধানের মুখাপেক্ষী মনে করে এবং আল্লাহর এ বিধান আলাদা আলাদাভাবে প্রত্যেকটি মানুষের কাছে না এসে বরং নবীদের ও আল্লাহর কিতাবের মাধ্যমেই মানুষের কাছে আসে বলে স্বীকার করে আর এই সংগে বংশ, গোত্র বা জাতি প্রীতিতে লিপ্ত হয় না বরং নির্ভেজাল সত্যের পূজারী হয়, সত্য যেখানে যে আকৃতিতে আবির্ভূত হোক না কেন তারা তার সামনে মস্তক অবনত করে দেয়৷
৬. ষষ্ঠ ও সর্বশেষ শর্ত হচ্ছে আখেরাত একটি ব্যাপক ও পরিপূর্ণ অর্থবোধক শব্দ৷ আকীদা-বিশ্বাসের বিভিন্ন উপাদানের সমষ্টির ভিত্তিতে এ আখেরাতের ভাবধারা গড়ে উঠেছে৷ বিশ্বাসের নিম্নোক্ত উপাদানগলো এর অন্তর্ভুক্তঃ
একঃ এ দুনিয়ায় মানুষ কোন দায়িত্বহীন জীব নয়৷ বরং নিজের সমস্ত কাজের জন্য তাকে আল্লাহর সামনে জবাবদিহি করতে হবে৷
দুইঃ দুনিয়ার বর্তমান ব্যবস্থা চিরন্তন নয়৷ এক সময় এর মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে এবং সে সময়টা একমাত্র আল্লাহই জানেন৷
তিনঃ এ দুনিয়া শেষ হবার পর আল্লাহ আর একটি দুনিয়া তৈরি করবেন৷ সৃষ্টির আদি থেকে নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে যত মানুষের জন্ম হয়েছে সবাইকে সেখানে একই সংগে পুনর্বার সৃষ্টি করবেন৷ সবাইকে একত্র করে তাদের কর্মকান্ডের হিসেব নেবেন৷ সবাইকে তার কাজের পূর্ণ প্রতিদান দেবেন৷
চারঃ আল্লাহর এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে সতলোকেরা জান্নাতে স্থান পাবে এবং অসতলোকদেরকে নিক্ষেপ করা হবে জাহান্নামে৷
পাঁচঃ বর্তমান জীবনের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও অসমৃদ্ধি সাফল্য ও ব্যর্থতার আসল মানদন্ড নয়৷ বরং আল্লাহর শেষ বিচারে যে ব্যক্তি উত্রে যাবে সে-ই হচ্ছে সফলকাম আর সেখানে যে উতরোবে না সে ব্যর্থ৷
এ সমগ্র আকীদা-বিশ্বাসগুলোকে যারা মনে প্রাণে গ্রহণ করতে পারেনি তারা কুরআন থেকে কোনক্রমেই উপকৃত হতে পারবে না৷ কারণ, এ বিষয়গুলো অস্বীকার করা তো দূরের কথা এগুলো সম্পর্কে কারো মনে যদি সামান্যতম দ্বিধা ও সন্দেহ থেকে থাকে তাহলে মানুষের জীবনের জন্য কুরআন যে পথনির্দেশ করেছে সে পথে তারা চলতে পারবে না৷
এ ধরনের
লোকেরা তাদের রবের পক্ষ থেকে সরল সত্য পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং তারা কল্যান লাভের অধিকারী।
Ulaaa'ika
'alaa hudam mir rabbihim wa ulaaa'ika humul muflihoon (সূরা বাক্কারাহ আয়াত-৫)
যেসব লোক (একথাগুলো মেনে নিতে) অস্বীকার করেছে, তাদের
জন্য সমান –তোমরা তাদের সতর্ক করো বা না করো, তারা মেনে নেবে না৷
Innal
lazeena kafaroo sawaaa'un 'alaihim 'a-anzar tahum am lam tunzirhum laa yu'minoon(সূরা
বাক্কারাহ আয়াত-৬)
https://www.quran411.com/