Sunday, June 30, 2024

রাসুলুল্লাহ (সা.) এঁর মিসওয়াক করা

 রাসুলুল্লাহ (সা.) যে মিসওয়াক ব্যবহার করতেন বা যেভাবে করতেন, তেমন বা সেভাবে মিসওয়াক ব্যবহার করা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) মিসওয়াক করতেন জয়তুন ও খেজুরগাছের ডাল দিয়ে। কাচা ও নরম গাছের ডালে মিসওয়াক ভালো হয়। তিক্ত স্বাদের গাছের ডাল (নিম) হলে মিসওয়াকে বাড়তি ফায়দা হাসিল হয়।

মিসওয়াক নিজ হাতের আঙুলের মতো মোটা এবং এক বিঘত পরিমাণ লম্বা হওয়া মুস্তাহাব, তবে জরুরি বা আবশ্যক নয়। এতে মিসওয়াক ধরতে ও করতে সুবিধা হয়।
ডান হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলি নিচে রেখে মিসওয়াক ধরতে হবে। মধ্যমা ও তর্জনী থাকবে ওপরে, বৃদ্ধাঙ্গুলি নিচে। এতে মুখের ভেতর ভালোভাবে ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে মিসওয়াক করা সম্ভব হয়। এ পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)।
মিসওয়াক করার সুন্নতসম্মত পদ্ধতি হলো ডান হাতে মিসওয়াক নিয়ে ডান দিক থেকে মিসওয়াক শুরু করা। দাঁতে প্রস্থে ও জিহ্বায় লম্বালম্বি মিসওয়াক করা সুন্নত। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/৭; আল বিনায়াহ: ১/২০৪, আদ্দুররুল মুখতার: ১/১১৩, রদ্দুল মুহতার ১/১১৪, ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ৩/৪৪)
আবু উমামাহ (রা.) বর্ণনায় আছে যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা মিসওয়াক করো। কারণ, মিসওয়াক মুখ পবিত্র ও পরিষ্কার করে এবং এটা মহান প্রভুর সন্তুষ্টি লাভের উপায়। আমার কাছে যখনই জিবরাইল (আ.) এসেছেন, তখনই আমাকে মিসওয়াক করার উপদেশ দিয়েছেন। শেষে আমার আশঙ্কা হয়, তা আমার ও আমার উম্মতের জন্য ফরজ করা হবে। আমি যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর হওয়ার আশঙ্কা না করতাম, তাহলে তাদের জন্য তা ফরজ করে দিতাম। আমি এত বেশি মিসওয়াক করি যে আমার মাড়িতে ক্ষত হওয়ার আশঙ্কা হয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২৮৯; ইবনে খুজাইমা, হাদিস: ১৩৫; ইবনে হিব্বান, হাদিস: ১০৬৭)
রাসুলুল্লাহ (সা.) কখন কখন মিসওয়াক করতেন
বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায়, রাসুলুল্লাহ (সা.) দিন-রাতের বিভিন্ন সময় মিসওয়াক করতেন। কিছু সময়ের নির্দেশনা দেওয়া যাক:
১. ঘুম থেকে উঠেই বা তাহাজ্জুদ আদায়ের আগে: হুজাইফা (রা.)–র বর্ণনায় আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) রাতের বেলা তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য উঠে মিসওয়াকে মুখ পরিষ্কার করে নিতেন। (বুখারি, হাদিস: ১,১৩৬; মুসলিম, হাদিস: ৫১৬)
২. ঘরে প্রবেশ করে: আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন ঘরে প্রবেশ করতেন, প্রথমে মিসওয়াক করতেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ২৫৩)
৩. শয্যার পাশে মিসওয়াক রাখা: আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘুমানোর সময় শয্যার পাশে মিসওয়াক রেখে ঘুমাতেন। যখনই ঘুম থেকে জেগে উঠতেন, প্রথমেই তিনি মিসওয়াক করতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৫,৯৬৯)
৪. অজুর আগে: আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘দিনে বা রাতে যখনই রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘুম থেকে জেগে উঠতেন, অজু করার আগে মিসওয়াক করে নিতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৪,৯০০)
৫. নামাজ ও অজুর সময়: রাসুলুল্লাহ (সা.) অজুর আগে মিসওয়াক করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
৬. জুমার দিনে: আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বরাতে একটি হাদিসে আছে যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য জুমার দিন গোসল ও মিসওয়াক করা কর্তব্য এবং সে সামর্থ্য অনুযায়ী সুগন্ধিও ব্যবহার করবে।’ (মুসলিম, হাদিস: ১,৮৪৫)
এ ছাড়া মুখ অপরিষ্কার থাকলে, কোরআন তিলাওয়াত করার আগে, মসজিদের ঢোকার আগে, কারও সঙ্গে দেখা করার আগে, কোনো ধর্মীয় মজলিশে যাওয়ার আগে মিসওয়াক করার কথা হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়।
মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও মিসওয়াক করেছেন রাসুলুল্লাহ (সা.)
আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আমার ঘরে থাকা অবস্থায় আমার বুকে মাথা রেখে ইন্তেকাল করেন। তিনি অসুস্থ হলে আমাদের মধ্যে কেউ দোয়া পড়ে তাঁকে ঝাড়ফুঁক করতেন। আমি তাঁকে ঝাড়ফুঁক করছিলাম। এমন সময় আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর (রা.) এল। তার হাতে মিসওয়াকের একটি তাজা ডাল। রাসুলুল্লাহ (সা.) সেদিকে তাকালেন। আমি বুঝতে পারলাম, তিনি মিসওয়াকের প্রয়োজন বোধ করছেন। আমি সেটি নিয়ে চিবিয়ে প্রস্তুত করে তাঁকে দিলাম। তিনি সেটি দিয়ে সুন্দরভাবে মিসওয়াক করলেন, যে রকম তিনি (সুস্থ সময়ে) করে থাকেন। এর পর তিনি সেটি আমাকে দিলেন। এর পরই তাঁর হাত ঢলে পড়ল। পার্থিব জীবনের শেষ দিনে এবং আখিরাতের প্রথম দিনে আল্লাহ তায়ালা আমার থুতুকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর থুতুর সঙ্গে মিলিয়ে দিলেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৪,৪৫১)
মিসওয়াক সঙ্গে রাখা
মিসওয়াকের প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর গুরুত্বারোপ এবং তাঁর আমল থেকে বোঝা যায়, প্রত্যেক মুসলমানের উচিত সর্বদা মিসওয়াক সঙ্গে রাখা।
আবু সালামা (র.) বলেন, ‘আমি জায়েদ (রা.)–কে দেখেছি, তিনি মসজিদে বসে থাকতেন, আর মিসওয়াক তাঁর কানের ওই স্থানে থাকত, যেখানে লেখকের কলম থাকে। অতঃপর যখনই তিনি নামাজের জন্য যেতেন মিসওয়াক করে নিতেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৭)
এ ছাড়া সালেহ ইবনে কায়সান (রহ.) বলেন, উবাদা ইবনে সামেত (রা.)–সহ এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অন্য সাহাবিরা চলাফেরা করার সময় তাঁদের কানে মিসওয়াক গুঁজে রাখতেন।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ১,৮০৫)
‘রাসুলুল্লাহ (সা.) অজুর পানি দিয়ে (ভিজিয়ে) দাঁতন (মিসওয়াক) করতেন।’ (মুসনাদে আবু ইয়ালা, কানজ, খণ্ড: ৭ম, পৃষ্ঠা: ২৫) ‘তারপর তিনি আড়াআড়ি দাঁত ঘষতেন, খাড়াখাড়ি নয়, কিন্তু জিবটা খাড়াখাড়ি ঘষতেন।’ (আবু নোয়াইম আহমাদ, তালখিস, পৃষ্ঠা: ২৩) ‘তারপর তিনি সেটাকে ধুয়ে কানে কলম রাখার মতো করে কানে রাখতেন।’ (তাবারানি, তালখিস, পৃষ্ঠা: ২৫)
সূত্র: মিরাজ রহমান
 reactions:

No comments:

Post a Comment