দুশ্চিন্তা বাড়ানোর উপকরণগুলো জানিঃ
১. খাবার স্কিপ করা বা বাদ দেয়া
২. প্রসেসড ফুড খাওয়া
৩. অ্যালকোহল আসক্তি, মাদক আসক্তি
৫. ২৪/৭ মিডিয়া চেক করা
৬. থিতু হয়ে থাকা, নড়াচড়া না করা
৭. কোয়ালিটি ঘুম থেকে বিরত থাকা, সাউন্ড স্লিপের অভাব
৮. গগুলে লেগে থাকা বা গুগলিং
৯. মুক্ত বাতাস না পাওয়া
১০. চিনি খাওয়া পরিমাণের অধিক
দুশ্চিন্তা কীভাবে দূর করা যাবে?
অহেতুক দুশ্চিন্তার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ে ঘুমে
বেশি চিন্তা মন আর শরীরের মধ্যে তৈরি করে ভারসাম্যহীনতা।
কথায় আছে, চিন্তাবিহীন কার্য নাকি ডেকে আনে বিপদ। তাই সূক্ষ্ম ভাবনাচিন্তার গুরুত্ব আমরা সবাই বুঝি। কিন্তু এই চিন্তা যদি হয় বাড়াবাড়ি ধরনের, অর্থাৎ প্রয়োজন ছাড়াই চিন্তা, তাহলে? এই ‘অতিরিক্ত চিন্তা’য় অনেকে মানসিক সমস্যায়ও পড়েন। ‘বেশি চিন্তা’ মন আর শরীরের মধ্যে তৈরি করে ভারসাম্যহীনতা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অহেতুক দুশ্চিন্তা অনেকটা চক্রের মতো। যত দূর করতে চাইবেন, তত আপনাকে জেঁকে ধরবে। কথায় আছে, ‘অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা’ মস্তিষ্ক যত অলস বসে থাকে, তত মাথায় জমা হয় অহেতুক চিন্তা। করোনা মহামারির সময়ে বাসায় বসে থাকতে হচ্ছে কমবেশি সবাইকে। আর সে সময়েই মাথায় জমা হচ্ছে হাজারো দুশ্চিন্তা।
অহেতুক দুশ্চিন্তায় কী হয়
অহেতুক দুশ্চিন্তার সূচনা হতে পারে যেকোনো জায়গা থেকেই। আর তার প্রভাব পড়ে দৈনন্দিন জীবনে।
কাজের পরিমাণ কমে যায়: অহেতুক দুশ্চিন্তা সবার আগে প্রভাব ফেলে তার দৈনন্দিন কাজের ওপরে। প্রথমে ফাঁকা সময়ে দুশ্চিন্তার উদ্রেক হলেও আস্তে আস্তে ব্যস্ত সময়েও প্রভাব ফেলা শুরু করে। কাজের উৎপাদনশীলতায়ও যার প্রভাব পড়ে।
ঘুম কমে যাওয়া: অহেতুক দুশ্চিন্তার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ে ঘুমে। ঘুমানোর জন্য প্রয়োজন হয় একটি শান্ত মন। আর সে সময়ে যদি দুশ্চিন্তা হানা দেয়, তবে কি আর ঘুম আসে? রাতের ঘুমে বড় প্রভাব ফেলে অহেতুক দুশ্চিন্তা।
অলসতা: দুশ্চিন্তা একবার শুরু হলে চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ে। আর সে চিন্তা শেষ না করে কোনো কাজে মন দেওয়াও সম্ভব হয় না। ফলে হয়তো ভেবে রেখেছেন এক ঘণ্টা পর কোনো কাজে বসবেন, অহেতুক দুশ্চিন্তা সে কাজকে পিছিয়ে দেবে আরও কয়েক গুণ।
পরিত্রাণের উপায়
কোনো সমস্যা থেকে বের হওয়ার প্রথম ধাপ হলো সমস্যা চিহ্নিত করা। দুশ্চিন্তা করা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, কিন্তু কখন এই দুশ্চিন্তা অহেতুক এবং অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে, সেটা বুঝতে শিখুন। বারবার একই বিষয় নিয়ে চিন্তা করা, একই সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করা—এগুলোই অহেতুক দুশ্চিন্তার লক্ষণ।
সমস্যার সমাধান খুঁজুন: বারবার একই সমস্যার কথা না চিন্তা করে সমাধানের পথ খুঁজুন। সমস্যার কথা ভেবে কখনো সমাধান আসে না। বরং যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে, ভেবে সমাধান নিয়ে ভাবলেই বরং চিন্তামুক্ত হওয়া সহজ।
নিজের জন্য সময় বরাদ্দ রাখুন: অহেতুক দুশ্চিন্তা নিজের স্বাভাবিক কাজ থেকেই দূরে সরিয়ে দেয় সবাইকে। নিজের কাজেই মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। যে কারণে সবকিছু বাদ দিয়ে পুরোনো কিছুতে ফিরে যান। ছবি আঁকা, বই পড়া; যেসব শখ বহু বছর আগে আপনার ছিল, সেটিতে মনোযোগ দিন কিংবা নতুন করে শুরু করুন। নিজের প্রিয় কাজে ব্যস্ত থাকলে আস্তে আস্তে নিজের মধ্যে হারানো আত্মবিশ্বাসও ফেরত পাবেন।
আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন: অনেক সময়ই অহেতুক দুশ্চিন্তা মানসিক চাপের সৃষ্টি করে, যা থেকে খিটখিটে মেজাজ কিংবা রেগে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। তখন সে রাগ গিয়ে পড়তে পারে নিরীহ কারও ওপর। সে কারণে এ সময়ে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন। নইলে সামান্য রাগ হতে পারে আপনার অন্য কোনো সময়ের দুশ্চিন্তার কারণ।
কথা বলুন: বেশির ভাগ সময় মনে জমিয়ে রাখা কথাই সৃষ্টি করে দুশ্চিন্তা। তাই যখনই মনে হবে মনের মধ্যে দুশ্চিন্তা বাসা বাঁধছে, তখনই নিজের প্রিয় বন্ধু কিংবা কাছের মানুষ কাউকে সব খুলে বলুন। দেখবেন নিজেকে যথেষ্ট ভারমুক্ত মনে হবে।
অতীতকে অতীতের জায়গায় থাকতে দিন: যখনই মনে হবে অহেতুক চিন্তা নিজের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে, দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে ভাবুন, ‘যা হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে।’ অতীতকে চাইলেও পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, ফলে ওসব নিয়ে ভেবেও লাভ নেই। অতীতকে অতীতের জায়গায় থাকতে দিলেই বরং সবার জন্য ভালো। এই চিন্তা নিয়ে নতুন করে কাজ শুরু করুন, তবেই এই দুষ্টচক্র থেকে বের হওয়া যাবে।
মনে রাখবেন, দুশ্চিন্তা মানুষের স্বাভাবিক চিন্তাধারারই বহিঃপ্রকাশ। দুশ্চিন্তা করাও দোষের কিছু নয়, কিন্তু এই দুশ্চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব আপনারই। খেয়াল রাখবেন, দুশ্চিন্তাকে যেন আপনি নিয়ন্ত্রণে রাখেন, দুশ্চিন্তা যেন আপনার জীবন নিয়ন্ত্রণ না করে।
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা সামলানোঃ
অতিরিক্ত ‘টেনশন’ বা উদ্বেগে ভোগা একধরনের সমস্যা। একে অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার বলা হয়। এ ক্ষেত্রে ছোটখাটো সমস্যা তারা অনেক বড় করে দেখে এবং যেকোনো বিষয়ের নেতিবাচক দিকটাই তাদের সামনে চলে আসে। এরা ছোটখাটো চাপ মোকাবিলা করতে হিমশিম খায়, যা জীবনের স্বাভাবিক গুণগত মান নানাভাবে (কর্মদক্ষতা, পারস্পরিক সম্পর্ক, জীবন উপভোগ করা ইত্যাদি) কমিয়ে দেয়।
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা কীভাবে মোকাবিলা করবেন?
•নিজেকে যথাসম্ভব রিলাক্সড রাখুন: অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগে ভুক্তভোগী ব্যক্তির মন ও শরীর সব সময় ‘টেনসন্ড’ থাকে বলে শরীর ও মন যাতে রিলাক্সড থাকে, সেটা চেষ্টা করা উচিত।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন অথবা প্রতিদিন অন্তত ৪০ মিনিট দ্রুত হাঁটুন। দেখবেন আপনার শরীর ও মন কিছুদিন পরে অনেক রিলাক্সড বা শান্ত বোধ করবেন।
প্রতিদিন অন্তত দুই থেকে তিনবার শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে (৪-৫ সেকেন্ড ধরে) লম্বা করে পেট ভরে শ্বাস নিয়ে কিছুক্ষণ (৪-৫ সেকেন্ড) ধরে রেখে ধীরে ধীরে (৪-৫ সেকেন্ড ধরে) বের করে দিতে হবে। এ রকম ১০-১২ বার করবেন। এ সময় সম্পূর্ণ মনোযোগ আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস বা শরীরের দিকে রাখুন। রিলাক্সেসনের জন্য এটা বিজ্ঞানসম্মত একটা চমৎকার ও সহজ পদ্ধতি।
দুশ্চিন্তাকে প্রশ্রয় না: যেকোনো নেতিবাচক চিন্তা বা দুশ্চিন্তা একবার মাথায় ঢুকলে সেগুলো আরও নেতিবাচক চিন্তা মাথায় আনে, যা শেষ পর্যন্ত হতোদ্যম করা ছাড়া কিছুই করে না। কাজেই প্রথম থেকেই কোনো নেতিবাচক চিন্তা এলে সেটা নিয়ে না ভেবে মন সঙ্গে সঙ্গে অন্যদিকে সরিয়ে ফেলুন বা নিজেকে অন্য কাজে নিয়োজিত করুন (যেসব কাজে আপনার মনোযোগ লাগবে)। গুনগুন করে গান গাওয়া বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এ ক্ষেত্রে খুব সাহায্য হতে পারে।
•সামাজিক মেলামেশা বাড়ানো: দুশ্চিন্তা, অশান্তি, অস্থিরতা, মন খারাপ কমানোর অন্যতম উপায় হলো সামাজিক মেলামেশা বাড়ানো। দেখা যায়, যাঁদের বন্ধুবান্ধব বেশি বা নানা ধরনের মানুষের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে, তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্য তুলনামূলকভাবে ভালো থাকে। আপনার চারপাশের অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী বা বন্ধুবান্ধব, সজ্জন ব্যক্তিদের দ্বারা মানসিকভাবে যুক্ত আছেন—এই বোধ আপনাকে মানসিকভাবে অনেক ভালো রাখবে। তবে সেটা যেন ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়ায় সীমাবদ্ধ না হয়। কাজেই মাঝেমধ্যে সপ্তাহের কাজের ভিড়ে কিছুটা সময় রাখুন বন্ধু-আত্মীয়-প্রতিবেশীর সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন আড্ডা বা সময় কাটানোর জন্য।
নিজের জন্য প্রতিদিন কিছু সময় রাখুন: প্রতিদিন খুব অল্প সময় হলেও নিজের জন্য কিছু সময় রাখুন। এ সময়টায় করার জন্য না করে বা দায়িত্বের জন্য না করে আপনার যেভাবে ভালো লাগে সেভাবে কাটান অথবা ভালো লাগার কোনো কাজ করুন।
•গ্রহণযোগ্যতা বাড়া: জীবনের নানা কিছু, সেটা সন্তানের পড়াশোনা, বাসার গৃহকর্মীর কাজ, জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক, অথবা যেকোনো কিছু—সব কিন্তু আপনার চাহিদা বা প্রত্যাশার মতো হবে না। অনেক কিছু পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা ‘না’ পাওয়াও থাকবে। কাজেই আপনার মনকে যদি ছোটখাটো ব্যর্থতা গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত করতে পারেন, তাহলে অনেক কিছুই দেখবেন সহজ হয়ে যাবে।
সেই সঙ্গে প্রতিনিয়ত যদি আপনার জীবনের ইতিবাচক দিকগুলোর (সেটা আপাতভাবে যত ছোটই মনে হোক না কেন) দিকে মনোযোগ দেন, তাহলে একরকম মানসিক শক্তি পাবেন। একটু মনোযোগ দিলে দেখবেন, প্রতিদিনই ছোটখাটো অনেক কিছুই ভালোভাবে ঘটছে, অথবা দিন শেষে অনেক ভালো মুহূর্তই জমা হচ্ছে আপনার কোটায়। সুতরাং মনোযোগী হোন আপনার জীবনের ইতিবাচক বিষয়ের প্রতি এবং নিজের বা অন্যদের ব্যর্থতা বা ছোটখাটো ভুলত্রুটি যথাসম্ভব উপেক্ষা করুন। সেই সঙ্গে ভালোবাসুন নিজেকে। মনে রাখবেন, নিজেকে ভালো রাখতে পারলেই ভালোবাসার মানুষদের জন্য যখন কিছু করবেন, সেটা গুণগত দিক দিয়েও উৎকর্ষ হবে।
No comments:
Post a Comment